চিত্রকূট নগরে রূপদত্ত নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। একদিন তিনি একা ঘোড়ায় চড়ে শিকার করতে বেরোলেন। হরিণের আশায় বনে বনে অনেক ঘুরলেন কিন্তু একটিও হরিণ না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে তিনি এক ঋষির আশ্রমে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানে সুন্দর একটি সরোবর ছিল। তিনি সরোবরের তীরে গিয়ে দেখলেন টলটল করছে নীল জল, তাতে অনেক পদ্মফুল ফুটে আছে। মৌমাছিরা গুনগুন করছে আর ফুলে ফুলে মধু খাচ্ছে। পাখিরা ডালে বসে গান করছে। রাজা মুগ্ধ হয়ে এই সব দেখতে লাগলেন।

এমন সময় অপূর্ব সুন্দরী এক ঋষিকন্যা আশ্রম থেকে বেরিয়ে সরোবরে নামল স্নান করতে । রাজা তার রূপে মুগ্ধ হলেন।
এমন সময় ঋষিও ফল, ফুল, সমিধ প্রভৃতি সংগ্ৰহ করে সেই পথ দিয়েই ফিরছিলেন। রাজা তাকে দেখে ভক্তিভরে প্রণাম করলে ঋষি আশীর্বাদ করে বললেন, তোমার মনের ইচ্ছা পূর্ণ হোক ।
রাজা হাতজোড় করে বললেন, আমি আপনার কন্যাকে বিয়ে করতে চাই। আমার ইচ্ছা পূর্ণ করুন প্রভু।
ঋষি রাজার এই প্রস্তাবে মনে মনে খুবই ক্রুদ্ধ হলেন। কিন্তু নিজের কথার সম্মান রক্ষা জন্য হলেন । কিন্তু নিজের কথার সম্মান রক্ষার জন্য রাজার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিলেন।
রাজা নববধূকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর দিকে রওনা হলেন। পথে রাত হয়ে গেল। রাজা ও তাঁর স্ত্রী ফলাহার করে গাছতলায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন ।
মাঝরাতে এক রাক্ষস এসে রাজাকে জাগিয়ে বললো, আমার খুব খিদে পেয়েছে, আমি তোমার স্ত্রীর নরম মাংস খাব৷
রাজা বললেন, তুমি আমার স্ত্রীর মাংস না খেয়ে অন্য যা চাও তাই দেব ।
রাক্ষস বললো, বেশ, যদি একটা বারো বছর বয়সের ব্রাহ্মণের ছেলের মাথা কেটে আমাকে দিতে পার তবে তোমার স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে পারি।
রাজা তখনি রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, সাত দিন পর আমার রাজধানীতে এলে তুমি তোমার জিনিস পাবে।
পরদিন রাজধানীতে গিয়ে মন্ত্রীকে সমস্ত বিষয় বললেন। মন্ত্রী সব শুনে বললেন, কিছু ভাববেন না মহারাজ, আমি ব্যবস্থা করছি।
তিনি স্যাকরাকে দিয়ে একটা মানুষের সমান সোনার মূর্তি তৈরী করে তাকে মূল্যবান গয়না পরিয়ে রাজধানীর চারদিকে ঘুরিয়ে ঘোষণা করিয়ে দিলেন, যে ব্রাহ্মণ তাঁর বারো বছরের ছেলেকে বলিদান দেবেন তিনি এই মূল্যবান মূর্তিটি পাবেন।
এক ব্ৰাহ্মণের বারো বছরের একটি ছেলে ছিল। তাঁরা বড়ই গরিব । দুবেলা খাবার জোটে না। ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণীকে বললেন, দেখ, ছেলেকে বলি দিলে প্রচুর সম্পদের অধিকারী হব আমরা। ছেলের জন্য ভাবনা কি, আবার হবে। ব্রাহ্মণীও এ বিষয়ে একমত হলেন।
রাজা বারো বছরের ব্রাহ্মণপুত্রকে পেয়ে খুব খুশি। আর কোন ভয় নেই। নির্দিষ্ট দিনে রাক্ষসও এসে উপস্থিত। বলি দেবার আগে ব্রাহ্মণপুত্র একটু হেসেছিল। তারপর রাজা খড়গ দিয়ে ব্রাহ্মণপুত্রের মাথাটি কেটে ফেললেন।
গল্প এখানেই শেষ করে বেতাল বললো, মহারাজ, মৃত্যুর সময় সকলেই ভয়ে কাঁদে কিন্তু ব্রাহ্মণপুত্র না কেঁদে হেসেছিল কেন ?
রাজা বিক্রমাদিত্য বললেন, হাসবে না ? বাল্যকালে বাবা-মার কাজ হচ্ছে সন্তানকে সবরকম বিপদ থেকে রক্ষা করা, কিন্তু তা না করে ঐ ব্রাহ্মণপুত্রের বাবা-মা সুখে জীবন কাটাবে বলে নিজের পুত্রকে বলি দিতে পাঠাল; আর রাজার কর্তব্য প্রজাপালন। কিন্তু নিজ স্ত্রীকে রক্ষা করার জন্য নিরপরাধ এক বালককে নিজ হাতে হত্যা করলেন।
বেতাল রাজার এই উত্তর শুনে আর বিলম্ব না করে সেই গাছে গিয়ে উঠল আর রাজাও তাকে গাছ থেকে নামিয়ে এনে কাঁধে নিয়ে রওনা হলেন। বেতালও তার বিংশ গল্প আরম্ভ করল।
0 coment�rios: