সেকালে জয়স্থল নগরে বিষ্ণুস্বামী নামে এক ধাৰ্মিক ব্ৰাহ্মণ বাস করতেন। তাঁর চার ছেলে চার অবতার, বাবার ঠিক উল্টো। বড়টি জুয়াড়ী, মেজটি চরিত্রহীন, সেজটি বেহায়া আর ছোটটি নাস্তিক ।
এই সময় বাবা-মা দু’জনেই মারা গেলে চার ভাইয়ের অবস্থা খুবই শোচনীয় হলো। কোন অভিভাবক না থাকায় বিষয় আশয় যা কিছু ছিল আত্মীয়স্বজনেরা সব আত্মসাৎ করলো। তখন চার ভাই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, কিছুই আর রইল না যখন তখন আর এখানে থেকে কি খেয়ে বাঁচব আমরা, এর চেয়ে চলো আমরা আমাদের মামাবাড়ি যজ্ঞস্থলে যাই ।
এইরকম সব যুক্তি করে চার ভাই যজ্ঞস্থলে গিয়ে হাজির হলো। চার ভাই সেখানে থেকে দিন কাটাতে লাগল। কিন্তু সে আর কত দিন ? নিঃস্ব কপর্দকহীন ভাগনেদের কতদিন আর মামারা পুষবেন? চার ভাইই লক্ষ্য করলো মামাবাড়িতে তাদের ক্রমেই যেন অবহেলা করা হচ্ছে, ঘৃণা করা হচ্ছে। এ ভাবটা যেন ক্রমশঃই বৃদ্ধি পেতে লাগল। তখন সবাই মিলে ঠিক করলে পৃথিবীর সর্বত্র ঘুরে দিব্য বিদ্যা অর্জন করে একটা নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট জায়গায় সবাই এসে মিলিত হবে। এরপর ঐ বিদ্যা লাভের জন্য কেউ গেল পুবে, কেউ গেল পশ্চিমে, কেউ উত্তরে, কেউ দক্ষিণে। সারা পৃথিবী ঘুরে বিদ্যা অর্জন করে একটা নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট জায়গায় এসে চার ভাই-ই আবার মিলিত হলো । এরপর কথা উঠলো কে কি বিদ্যা অর্জন করে এসেছে। একজন বললো, কোন মৃত জীবের হাড় পেলে আমি আমার বিদ্যাবলে তাতে মাংস বসিয়ে দিতে পারি। দ্বিতীয়জন বললো, আমি আবার তাতে চামড়া এবং লোম বসিয়ে দিতে পারি। তৃতীয় ভাই বললো, আমি তাতে ঐ জীবের অন্যান্য অঙ্গ সৃষ্টি করে তাকে পূর্ণাঙ্গ করে দিতে পারি। তৃতীয়ের কথা শেষ হলে চতুর্থ ভাই বললো, আমি শিখে এসেছি এইরকম মৃত জীবের দেহে প্রাণ সঞ্চার করতে ।
শুরু হলো হাড় খোজা, খুঁজতে খুঁজতে পাওয়াও গেল বনের মাঝে কযেকখানা হাড়, সিংহের হাড়। হাড়টা পেয়েই চার ভাই নিজের নিজের বিদ্যা জহির করতে শুরু করে দিল। প্রথম ভাই হাড়ে মাংস লাগিয়ে দিল, দ্বিতীয় বসালে তাতে চামড়া আর লোম, তৃতীয় ভাই ঐ জীবের আর যে যে অঙ্গ বাকী ছিল তা সংযোগ করে তাকে পূর্ণাঙ্গ করে দিল, হয়ে উঠল তখন সেটা একটা সিংহের দেহ, চতুর্থ ভাই-ই বা তখন তার বিদ্যা জাহির করবে না কেন? সে তখন তাতে প্রাণ সঞ্চার করতেই সেই ভয়ংকর সিংহটা কেশর ফুলিয়ে তীক্ষনখরওয়াল থাবার ঘা মেরে ও কামড়ে চার ভাইকেই খেয়ে ফেলল ।
গল্প শেষ করে বেতাল বললো, এবার বল তো, চার ভাইয়ের সৃষ্ট সিংহ যে চার ভাইকেই শেষ করলো, এর জন্য দোষী কে ?
উত্তরে রাজা বললেন, দোষ হচ্ছে তার-যে একে প্রাণ দান করেছে, অন্য তিন ভাই শুধু নিজের নিজের বিদ্যার পরিচয় দিয়েছে, জীবটা শেষে কি হয়ে দাঁড়াবে তারা তা বুঝতেই পারে নি, কিন্তু শেষের জন যখন দেখল এ একটা সিংহের দেহ, তখন সে মূর্খের মত তাতে প্রাণ সঞ্চার করতে গেল বলেই এই কাণ্ডটি ঘটল।
রাজার মুখে এই কথা শুনে বেতাল তাঁর কাঁধ ছেড়ে আগে যেখানে ছিল, সেখানে আবার চলে গেল এবং রাজা আবার সেখান থেকে তাকে তুলে আনলেন।
বেতালও দ্বাবিংশ গল্প বলতে আবস্তু করল।
0 coment�rios: