আজ থেকে অনেক বছর কথা। তখন উজ্জয়িনঅ নামে এক নগর ছিল। নগরটি দেখতে যেমন সুন্দর ছির তেমনি সেকালে বাস করতো সব পন্ডিত আর গুণী লোকেরা। সেখানকার রাজার নাম ছিল গন্ধর্বসেন। মহারাজ গন্ধর্ব সেনের চার রাণী ও ছয় পুত্র ছিল। রাজকুমাররা গুরুর শিক্ষা লাভ করে পন্ডিত ও বিচক্ষণ হয়ে ওঠেন। কিন্তু রাজা গন্ধর্বসেন হঠাৎ মারা যান। তখন নিয়ম ছিল বড় পুত্র সিংহাসনে বসবে। গন্ধর্বসেনের বড় পুত্র শঙ্কু মহাসমারোহে সিংহাসনে বসেন।
ছয় রাজকুমারের মধ্যে বিক্রমাদিত্য ছিলেন সবচেয়ে ছোট-- তাঁর খুব সিংহাসনে বসার লোভ। তাই তিনি চুপিচুপি শঙ্কুকে হত্যা করে নিজে সিংহাসনে বসলেন।

অবশ্য অন্যায় পথে সিংহাসনে বসলেও রাজা হিসাবে বিক্রমাদিত্য উপযুক্ত ছিলেন। প্রথমেই তিনি রাজ্যের সীমা অনেক বাড়িয়ে নিলেন । বিক্রমাদিত্যের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো।
একদিন তিনি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন – আমি সকল প্রজার রাজা। প্রজাদের সুখ-দুঃখ দেখার ভার আমার । অথচ আমি রাজপ্রাসাদে বেশ সুখে দিন কাটাচ্ছি। আমার লোকেরা প্রজাদের সাথে কেমন ব্যবহার করে তা একবার দেখা উচিত ।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ । তিনি রাজ্যের ভার তাঁর ভাই ভতৃহরির হাতে দিয়ে ছদ্মবেশে দেশভ্রমণে বের হলেন । বিক্রমাদিত বহু দেশ ঘুরলেন, প্রজাদের সাথে আলাপ করলেন, তাদের অসুবিধার কথা শুনলেম ।
একদিন তিনি খবর পেলেন যে ভতৃহরি, যার হাতে রাজ্যের ভার দিয়ে এসেছিলেন, তিনি নাকি স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে রাজপাট ফেলে বনে গিয়ে যোগসাধনা করছেন । এ খবর পাওয়ামাত্র বিক্রমাদিত্য উজ্জয়িনীর দিকে যাত্রা করলেন।
এদিকে হয়েছে কি, দেবরাজ যখন দেখলেন যে উজ্জয়িনীতে কোন রাজা নেই, চারিদিকে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে তখন তিনি এক যক্ষকে নগরের পাহারাদার হিসাবে পাঠালেন ।
এই যক্ষ বিক্রমাদিত্যকে চিনতো না । সে দেখে গভীর রাতে একটা লোক নগরে ঢুকছে যক্ষ সাথে সাথে তার সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, এ্যাই, আমায় না বলে কোথায় যাচ্ছিস ? তোর নাম কি ?
বিক্রমাদিত্য খুব সাহসী ছিলেন। তিনি একদম ভয় না পেয়ে বললেন, আমি এই নগরের রাজা – নাম বিক্রমাদিত্য। কিন্তু তুই জিজ্ঞাসা করার কে? যক্ষ-বললো, দেবরাজ ইন্দ্র আমায় এই নগরের পাহারার ভার দিয়েছেন, তাঁর অনুমতি ছাড়া তো তোকে এখন ঢুকতে দেব না, আর তুই যদি সত্যিই বিক্রমাদিত্য হোস তবে আমার সাথে যুদ্ধ কর, যদি জিতিস তবে নগরে ঢুকতে পারবি।
দু'জনেই প্রস্তুত যুদ্ধের জন্য । তাদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ চললো। কিন্তু বিক্রমাদিত্যের সাথে কি যক্ষ যুদ্ধ করে পারে নাকি! কিছুক্ষণ পরেই বিক্রমাদিত্য যক্ষকে মাটিতে ফেলে তার বুকের উপর চেপে বসলেন ।
যক্ষ হার স্বীকার করে নিয়ে বললো, মহারাজ, আপনার পরাক্রম দেখে বুঝলাম যে, আপনি যথার্থই রাজা বিক্রমাদিতা। দয়া করে আমাকে যদি এখন ছেড়ে দেন তবে তার বিনিময়ে আমি আপনার প্রাণ বাঁচাব ।
একথা শুনে রাজা খুব হাসলেন। তারপর বললেন, তোর প্রাণ এখন আমার হাতের মধ্যে আর তুই কিনা আমার প্রাণ বাঁচাবি?
যক্ষ বললে, মহারাজ, আপনি ঠিকই বলেছেন।কিন্তু আমি যেমন বলবো সেই মত যদি কাজ করেন তবে দীর্ঘদিন সুখে রাজত্ব করতে পারবেন।
রাজা খুব অবাক হলেন। তিনি যক্ষের বুক থেকে উঠে পড়ে

বললেন, বল, তোর কি বলার আছে। যক্ষ তার কথা বলতে শুরু করলো---
ভোগবতী নামে এক নগর ছিল। সেখানকার রাজার নাম চন্দ্রভানু। চন্দ্রভানুর খুব শিকারের শখ ছিল, মাঝে মাঝেই

বাড়ি ফিরে এসে চন্দ্রভানু মনে মনে ভাবতে লাগলেন, সত্যি কি কঠোর পরিশ্রম করছেন ঐ সাধু ! ওঁর তপস্যা যদি কোনভাবে বানচাল যায় তবে বেশ হয়।
পরদিন তিনি সারা রাজ্যে ঢ্যাড়া পিটিয়ে জানিয়ে দিলেন, যে ঐ সাধুকে রাজসভায় নিয়ে আসতে পারবে তাকে এক লক্ষ মুদ্রা পুরস্কার দেওয়া হবে।
ঐ নগরে একটি মেয়ে থাকতো, সে খুবই গরিব । কোনরকমে দুবেলা খেতে পায়। সে ভাবলো, যদি কোনরকমে সাধুকে ভুলিয়ে ভালিয়ে এখানে নিয়ে আসা যায়, তাহলে আর আমার কোন অভাব থাকে না।
সে রাজার কাছে গিয়ে বললো, মহারাজ, আমি ঐ সাধুকে বিয়ে করে ছেলেসুদ্ধ এখানে নিয়ে আসবো। আমায় তবে পুরো এক লক্ষ মুদ্রা পুরস্কার দেবেন তো ?
মহারাজের সম্মতি পেয়ে মেয়েটি তখনি বনের দিকে যাত্রা করলো। গিয়ে দেখল সাধু সেই একইভাবে পা উপর দিকে, মাথা নীচের দিকে করে ঝুলে আছেন। সাধুর রোগা-পটকা চেহারা দেখে সে ভাবল, এখন একে না জাগানোই ঠিক হবে। সেখানে একটা কুটির তৈরি করে সে থাকতে লাগল। রোজ সে মোহনভোগ রান্না করতো আর একটু একটু করে সাধুর মুখে দিত। বেশ মিষ্টি মিষ্টি লাগায় সাধুও তা খেয়ে ফেলতেন ।
এইভাবে কিছুদিন মোহনভোগ খেতে খেতে সাধু গায়ে জোর পেলেন, চোথ মেলে তাকালেন। তারপর গাছ থেকে নেমে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, কে তুমি? একা একা এই বনে কি করছ? সে উত্তরে বললো, আমি দেবকন্যা, তীর্থ করতে বেরিয়েছি। আপনার কঠোর তপস্যা দেখে ভাবলাম, কিছুদিন এখানে থেকে আপনার সেবা করি ।
সাধু খুব খুশি হয়ে বললেন, তোমার ব্যবহারে আমি খুশি হয়েছি। তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমি তোমার আশ্রম দেখতে চাই।
মেয়েটি সাধুকে তার কুটিরে নিয়ে গেল, আর খুব সেবাযত্ন করতে লাগল। সাধু তার মিথ্যা ছলনায় ভুলে তাকে বিয়ে করলেন এবং সেই কুটিরেই রয়ে গেলেন। এক বছর পর তাদের খুব সুন্দর একটি ছেলে হলো। মেয়েটি তখন সাধুকে বললো, বহুদিন হলো আমরা এখানে আছি, আমার মনে হয় এবার আমাদের তীর্থে বেরোনো উচিত ।
সাধু রাজি হলেন। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তারা রওনা হলো। মেয়েটি সাধুকে নিয়ে সোজা রাজসভায় এসে উপস্থিত হলো । -
তাদের দেখে রাজা তাঁর সভাসদদের বললেন, দেখ মেয়েটি তার কথা রেখেছে। সাধুকে বিয়ে করে ছেলেসুদ্ধ নিয়ে এসেছে! কথামত ওকে এক লক্ষ মুদ্রা দেওয়া হোক ।
একথা সাধুর কানে যেতে তিনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন । ছেলেকে সেখানেই ফেলে রেখে তিনি বনের দিকে যাত্রা করলেন । যেতে যেতে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, যে করেই হোক এই রাজার উপর প্রতিশোধ নেবই !
আরও কঠোর তপস্যা করে সাধু আরও ক্ষমতার অধিকারী হলেন। তারপর রাজা চন্দ্রভানুকে হত্যা করলেন ।
এখানেই গল্প শেষ করে যক্ষ বললো, মহারাজ, আপনি, চন্দ্রভানু আর ঐ যোগী, তিনজনে একই নগরে, একই লগ্নে, একই নক্ষত্রে জন্মেছিলেন। আপনি রাজবংশে জন্মগ্রহণ করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাজা হয়েছেন । চন্দ্রভানু তেলীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেও ভোগবতী নগরের রাজা হয়েছিলেন। আর ঐ যোগী কুমোরের ঘরে জন্মেছিল, কিন্তু যোগসাধনা করে সে অনেক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে।
চন্দ্রভানুকে হত্যা করে সে তাঁকে বেতাল করে শ্মশানের একটা শিরীষ গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। এখন আপনাকে হত্যা করার চেষ্টায় আছে। আপনি যদি তার হাত থেকে রেহাই পান, তবে বহুদিন রাজত্ব করতে পারবেন।
এই বলে যক্ষ চলে গেল। বিক্রমাদিত্য এসব কথা চিন্তা করতে করতে রাজপ্রাসাদে এসে পৌঁছলেন। প্রজারা এতদিন পর তাদের রাজাকে পেয়ে তো মহা খুশি । গোটা রাজ্যে খুশির জোয়ার ছড়িয়ে পড়লো। রাজাও প্রজাপালন ও রাজ্যশাসন করতে লাগলেন ।
এইভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। রাজসভায় একদিন শান্তশীল নামে এক সন্ন্যাসী এলেন। তিনি রাজার সাথে নানা বিষয়ে আলোচনা করতে লাগলেন। তারপর রাজার হাতে একটা ফল দিয়ে তাঁকে আশীর্বাদ করে বিদায় নিলেন। রাজা মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন, যক্ষ যে যোগীর কথা বলেছিল এ সে নয়তো? না জেনে ফলটা খাওয়া ঠিক হবে না ।
তিনি যত্ন করে ফলটা রাজকোষে রেখে দিলেন। এরপর থেকে সন্ন্যাসী রোজ আসতে লাগলেন আর যাবার সময় একটি করে ফল দিয়ে আশীর্বাদ করতেন। রাজাও সব ফল রাজকোষে রেখে দিতেন। একদিন বিক্রমাদিত্য সভাসদদের সাথে ঘোড়াশালা দেখতে গেছেন, সন্ন্যাসী সেখানে উপস্থিত হয়ে রোজকার মত তাঁকে ফলটি দিলেন।

কিন্তু হঠাৎ ফলটি রাজার হাত থেকে পড়ে গেল এবং তার মধ্যে থেকে এক অপূর্ব রত্ন বের হলো | রাজী অবাক হয়ে সাধুকে বললেন, আপনি কি জন্য আমায় এই দামী রত্নযুক্ত ফল দিলেন?
সাধু বললেন, মহারাজ, শাস্ত্রে আছে — রাজা, গুরু, জ্যোতির্বিদ এবং চিকিৎসকের কাছে খালি হাতে যেতে নেই, তাই আমি এই ফলটি নিয়ে আসি ।
আর শুধু এই ফলটির মধ্যেই যে রত্ন আছে তা নয়, আমি প্রতিদিন আপনাকে যে ফলগুলো দিয়েছি, তার প্রত্যেকটার মধ্যে একই রত্ন আছে।
রাজা তখন কোষাধ্যক্ষকে দিয়ে সেই ফলগুলি আনিয়ে ভেঙে দেখলেন প্রত্যেকটির মধ্যেই একটি করে রত্ন আছে। তারপর রাজা এক জহুরীকে দিয়ে সেই রত্নগুলি পরীক্ষা করলেন। জহুরী বললো, মহারাজ, রত্নগুলির মূল্য কয়েক কোটি মুদ্রারও বেশী। এককথায় বলতে গেলে এগুলি অমূল্য রত্ন ।


শুনে রাজা খুব আনন্দিত হলেন, তারপর সন্ন্যাসীর হাত ধরে বললেন, প্রভু, আমার সাম্রাজ্যও আপনার এই রত্নগুলির সমান দাম হবে না, আপনি সন্ন্যাসী হয়ে এই সব অমূল্য রত্ন কোথায় পেলেন আর কেনই বা এসব আমায় দিলেন, তা জানতে ইচ্ছা করছে।
সন্ন্যাসী বললেন, মহারাজ, ঔষধ আর মন্ত্রণা সবার সামনে বলা ঠিক নয়। যদি বলেন তো নির্জনে গিয়ে বলি।
রাজা তখন সন্ন্যাসীকে আলাদা ঘরে নিয়ে গিয়ে বললেন, প্রভু, আপনি আমায় এত দামী দামী রত্ন দিলেন, অথচ একদিনও আমার বাড়িতে কিছু খেলেন না । আদেশ করুন আপনার জন্য আমি কি করতে পারি, আমি প্রাণ দিয়ে তা পালন করবো।
সন্ন্যাসী বললেন, আগামী ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে গোদাবরী নদীর তীরের শ্মমানে আমি মন্ত্রসিদ্ধ করবো ; তাতে আমার অনেক ক্ষমতা লাভ হবে। আপনার কাছে আমার অনুরোধ, আপনি যদি সেদিন রাত্রে আমার আশ্রমে যান আর কথামত কাজ করেন তাহলেই আমার মন্ত্রসিদ্ধ হবে। "
রাজা বললেন, আপনি নিশ্চিন্ত থাকবেন, ঠিক সময়ে আমি আপনার আশ্রমে পৌঁছে যাব।
বিক্রমাদিতাকে আশীর্বাদ করে সন্ন্যাসী চলে গেলেন ।
দেখতে দেখতে সেই কৃষ্ণ চতুর্দশীর রাত এলো। বিক্রমাদিত্য ঠিক সময়ে হাতে একখানা তলোয়ার নিয়ে সন্ন্যাসীর আশ্রমে এসে হাজির হলেন। দেখলেন, সন্ন্যাসী যোগাসনে বসে দুই হাতে দুটি কঙ্কালেল খুলি নিয়ে বাজাচ্ছেন, আর তার চারদিকে বিকটাকৃতি ভূত, প্রেত, পিশাচ, ডাকিনীরা নাচছে।


এসব ব্যাপার দেখে বিক্রমাদিত্য কিছুমাত্র ভয় পেলেন না। হাত জোড় করে বললেন, প্রভু, আমি হাজির, বলুন কি করতে হবে।
সন্ন্যাসী আশীর্বাদ করে হাত দিয়ে সামনে পাতা আসন দেখিয়ে দিলেন । তারপর বললেন, তোমার ব্যবহারে আমি খুব খুশি হয়েছি। এখান থেকে দুই ক্রোশ দক্ষিণে একটা শ্মশান আছে, সেখানে দেখবে শিরীষ গাছে একটা মড়া ঝুলছে। তুমি সেটা গাছ থেকে নামিয়ে আমার কাছে নিয়ে এসো।
বিক্রমাদিত্য ‘যে আজ্ঞা’ বলে রওনা হলেন। সন্ন্যাসী আবার যোগাসনে বসলেন।
অমাবস্যার রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার। তাতে আবার মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। চারদিক থেকে ভুপ্রেতের চেঁচামেচির আওয়াজ কানে আসছে। এমন অবস্থায় কার না একটু ভয় হয়। কিন্তু বিক্রমাদিত্য বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বড় বড় পা ফেলে শ্মশানে গিযে পৌঁছলেন।
সেই বিভৎস জায়গার কথা মুখে বলে শেষ করা যায় না। তিনি দেখলেন, চারিদিকে ভূতপ্রেত, ডাকিনীরা জ্যান্ত মানুষ ধরে খাচ্ছে। আর সেই শিরীষ গাছের শিকড় থেকে মগডাল পর্যন্ত ধক-ধক করে আগুন জ্বলছে।
শিরীষ গাছের আরো কাছে গিয়ে তিনি দেখলেন গাছের ডালে মাথা নিচের দিকে ও পা উপর দিকে করে দড়ি বাঁধা একটি মড়া ঝুলছে।
বিক্রমাদিত্যের আর বুঝতে বাকি রইলো না যক্ষ যে সন্ন্যাসীর কথা বলেছিলেন এ সেই। দেরী না করে তিনি তরতর করে গাছে উঠে কোমর থেকে তলোয়ার বার করে তাই দিয়ে মড়ার পায়ের দড়ি কেটে দিলেন। মড়াটি নীচে পড়েই চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল। রাজা তারাতাড়ি গাছ থেকে নেমে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কে? কি করে তোমার এমন দশা হলো?
এই কথা শুনে মড়াটি খিলখিল করে হাসতে লাগল। এসব দেখে রাজা তো একেবারে হতভম্ব। এই সুযোগে মড়াটি নিজেই সুড়সুড় করে গাছে উঠে আবার আগের মত ঝুলে রইল। রাজাও ছাড়ার পাত্র নন। তিনিও আবার গাছে উঠে দড়ি কেটে তাকে নীচে নামালেন।
গাছ থেকে নেমে রাজা তাকে তার এই দুরবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু সে চুপ করে রইলো।
বিক্রমাদিত্য ভাবলেন, এ হয়তো সেই রাজা চন্দ্রভানু, সন্ন্যাসী একে এমন করে রেখেছে। তখন তিনি মড়াটিকে নিজের গায়ের চাদর দিয়ে জড়িয়ে কাঁধে তুলে সন্ন্যাসীর উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
এমন সময় বেতাল অর্থাৎ সেই মড়াটি কথা বলে উঠলো, ওহে বীরপুরুষ তুমি কে? আমায় কোথায় এবং কেন নিযে যাচ্ছ?
রাজা বললেন, আমার নাম বিক্রমাদিত্য। শান্তশীল নামে এক যোগীর আদেশ অনুসারে তোমায় আমি তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি।
বেতাল বলল, শা্স্ত্রে আছে, কেবল মূর্খ, বোকা আর কুঁড়েরা মুখ বুজে পথ চলে। যাদের জ্ঞানবুদ্ধি আছে তারা নানা রকম ভাল কাজ করতে করতে এবং ভাল কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হয়। আমিও তোমাকে কয়েকটা গল্প বলবো আর প্রত্যেক গল্পের শেষে একটা প্রশ্ন করবো। যদি সঠিক উত্তর দাও তাহলে আমি আকার শিরীষ গাছে ফিরে যাব আর যদি ভুল উত্তর দাও তাহলে কিন্তু তুমি বুক ফেটে মারবে।
আর কোন উপায় না দেখে বিক্রমাদিত্য বললেন, বেই তাই বল।
তারপর মড়া কাঁধে নিয়ে সন্ন্যাসীর আশ্রমের দিকে পা বাড়ালেন। বেতালও তার প্রথম গল্প আরম্ভ করল।
বিক্রমাদিত্য ‘যে আজ্ঞা’ বলে রওনা হলেন। সন্ন্যাসী আবার যোগাসনে বসলেন।
অমাবস্যার রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার। তাতে আবার মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। চারদিক থেকে ভুপ্রেতের চেঁচামেচির আওয়াজ কানে আসছে। এমন অবস্থায় কার না একটু ভয় হয়। কিন্তু বিক্রমাদিত্য বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বড় বড় পা ফেলে শ্মশানে গিযে পৌঁছলেন।
সেই বিভৎস জায়গার কথা মুখে বলে শেষ করা যায় না। তিনি দেখলেন, চারিদিকে ভূতপ্রেত, ডাকিনীরা জ্যান্ত মানুষ ধরে খাচ্ছে। আর সেই শিরীষ গাছের শিকড় থেকে মগডাল পর্যন্ত ধক-ধক করে আগুন জ্বলছে।
শিরীষ গাছের আরো কাছে গিয়ে তিনি দেখলেন গাছের ডালে মাথা নিচের দিকে ও পা উপর দিকে করে দড়ি বাঁধা একটি মড়া ঝুলছে।
বিক্রমাদিত্যের আর বুঝতে বাকি রইলো না যক্ষ যে সন্ন্যাসীর কথা বলেছিলেন এ সেই। দেরী না করে তিনি তরতর করে গাছে উঠে কোমর থেকে তলোয়ার বার করে তাই দিয়ে মড়ার পায়ের দড়ি কেটে দিলেন। মড়াটি নীচে পড়েই চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল। রাজা তারাতাড়ি গাছ থেকে নেমে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কে? কি করে তোমার এমন দশা হলো?
এই কথা শুনে মড়াটি খিলখিল করে হাসতে লাগল। এসব দেখে রাজা তো একেবারে হতভম্ব। এই সুযোগে মড়াটি নিজেই সুড়সুড় করে গাছে উঠে আবার আগের মত ঝুলে রইল। রাজাও ছাড়ার পাত্র নন। তিনিও আবার গাছে উঠে দড়ি কেটে তাকে নীচে নামালেন।
গাছ থেকে নেমে রাজা তাকে তার এই দুরবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু সে চুপ করে রইলো।
বিক্রমাদিত্য ভাবলেন, এ হয়তো সেই রাজা চন্দ্রভানু, সন্ন্যাসী একে এমন করে রেখেছে। তখন তিনি মড়াটিকে নিজের গায়ের চাদর দিয়ে জড়িয়ে কাঁধে তুলে সন্ন্যাসীর উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
এমন সময় বেতাল অর্থাৎ সেই মড়াটি কথা বলে উঠলো, ওহে বীরপুরুষ তুমি কে? আমায় কোথায় এবং কেন নিযে যাচ্ছ?
রাজা বললেন, আমার নাম বিক্রমাদিত্য। শান্তশীল নামে এক যোগীর আদেশ অনুসারে তোমায় আমি তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি।
বেতাল বলল, শা্স্ত্রে আছে, কেবল মূর্খ, বোকা আর কুঁড়েরা মুখ বুজে পথ চলে। যাদের জ্ঞানবুদ্ধি আছে তারা নানা রকম ভাল কাজ করতে করতে এবং ভাল কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হয়। আমিও তোমাকে কয়েকটা গল্প বলবো আর প্রত্যেক গল্পের শেষে একটা প্রশ্ন করবো। যদি সঠিক উত্তর দাও তাহলে আমি আকার শিরীষ গাছে ফিরে যাব আর যদি ভুল উত্তর দাও তাহলে কিন্তু তুমি বুক ফেটে মারবে।
আর কোন উপায় না দেখে বিক্রমাদিত্য বললেন, বেই তাই বল।
তারপর মড়া কাঁধে নিয়ে সন্ন্যাসীর আশ্রমের দিকে পা বাড়ালেন। বেতালও তার প্রথম গল্প আরম্ভ করল।
সুন্দর হয়েছে।
উত্তর দিনমুছুন