বোধিসত্ত্ব একবার রাজমহর্ষির গর্ভে জন্ম নেন। তাঁর নাম রাখা হয় ‘শীলবান কুমার।’ ষোল বছর বয়সের মধ্যেই তিনি সর্ব বিদ্যায় শিক্ষিত হন। তারপর বাবার মৃত্যুর পর রাজা হলেন। রাজ্য পরিচালনায ধর্ম বুদ্ধির জন্য লোকে তাঁকে মহাশালবান রাজা বলত।
রাজা মহাশীলবানের এক মন্ত্রী অন্তঃপুরের এক যুবতীর সঙ্গে খারাপ আচারন করে। সেই ঘটনা পাঁচ কান হয়ে রাজার কানেও এল। শীলবান রাজা তখন তাকে রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দিলেন।
সেই মন্ত্রী তখন কাশী ছেড়ে কোশল রাজ্যে গেল। সেখানকার রাজার বেশ প্রিয় পাত্র হয়ে উঠল। একদিন সে কোশল রাজাকে বলল, ‘মহারাজ, কাশী হল এমন এক রাজ্য যার তুলনা করা চলে মৌমাছি হীন মৌচাকের সঙ্গে। ওখানকার রাজা খুব ভিতু, সামান্য সৈন্য নিয়েও কাশী দখল করা সহজ।
শুনে কোশলরাজ ভাবল, ‘লোকটা নিশ্চয়ই শত্রুর চর। নইলে কাশী এত বড় রাজ্য, আর এ বলে কিনা সামান্য সৈন্য নিয়ে কাশী দখল করা সম্ভব।’ তখন কোশল রাজ তাকে বলল, ‘আমার মনে হচ্ছে তুমি কাশীরাজের গুপ্তচর।’
‘না, মহারাজ। আমার কথা বিশ্বাস না করেন তাহলে আপনি সীমান্তের গ্রামে অত্যাচারের জন্য দু’চার জন লোক পাঠান। দেখবেন তারা অত্যাচার করা স্বর্তেও কাশীরাজ তাদের কোন শাস্তি দেবেন না।’
তার কথা শুনে কোশল রাজ মনে হল হয়তো ও ঠিক বলেছে। পরীক্ষা করার জন্য সে প্রথমে কাশীরাজের সীমান্তের গ্রামে হামলা করা জন্য কয়েকজন লোককে পাঠাল। হামলাকারীরা ধরা পড়ল। কাশীরাজের কাছে তাদের নিয়ে গেলে তিনি বললেন, ‘তোমরা অহেতুক গ্রামের লোকগুলোকে মারতে গেলে কেন?’
তারা বলল,‘মহারাজ, আমরা পেটের জন্য ডাকাতি করি।’
তখন কাশীরাজ বললেন, ‘অযথা প্রাণীবধ না করে আমার কাছে এলেই তো পারতে। যা গে, যা হবার হয়েছে। এই নাও টাকা, এবার থেকে সৎভাবে বাঁচতে চেষ্টা করবে।
সেই লোকগুলি ফিরে এসে কোশল রাজাকে ঘটনার বিবরণ দিল। কিন্তু কোমল রাজের সন্দেহ দূর হল না। সে আবার এক দল পাঠাল রাজপথে ডাকাতি করতে। এবারও সেই একই ঘটনা ঘটল। কোশল রাজ এবার নিশ্চিত হয়ে সৈন্যসামন্ত নিয়ে কাশী আক্রমণ করল।
কাশীরাজের এক হাজার বীর যোদ্ধা ছিল যাদের সঙ্গে লড়াই করে জেতা প্রায় অসম্ভব। মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়লেও তারা পালিয়ে আসার পাত্র ছিল না। শীলবান রাজা আদেশ দিলে চোখের নিমেষে তারা কোশলরাজকে বন্দী করে আনতে পারত কিন্তু কাশীরাজ প্রাণহানি চান না। তিনি বরলেন, ‘যুদ্ধের দরকার নেই। আমার জন্য মপ্রাণহানি হোক আমি চাই না। যার রাজ্য লোভ আছে সে রাজ্য দখল করুক।’
বিনা বাধায় কোশল রাজসভায় ডুকে পড়ল। রাজা আর তাঁর মন্ত্রীদের বন্দী করে আদেশ দিল, ‘শ্মশানে গর্ত খুঁড়ে এদের পুঁতে ফেল। শুধু এদের মাথা যেন বাইরে থাকে। রাতে শেয়ালকুকুরে এদের খাবে।
কাশীরাজের মনে এতেও রাগ দেখা দিল না। মন্ত্রীরাও শীলবান রাজার অনুগত। তারা কেউ কোন কথা বলল না। যাই হোক, কাশরিাজ ও তাঁর মন্ত্রীদের তো পুঁতে রেখে গেল কোশল রাজের চাকররা। এদিকে রাত হয়েছে। শিয়ালের দল এল। তখন রাজা আর মন্ত্রীরা চিৎকার করে তাদের তাড়িয়ে দিল। পরপর তিনবার তাড়ানোর পর শিয়ালদের ভয় ভেঙ্গে গেল। তারা বুঝতে পারল চিৎকার করা ছাড়া এদের আর কোন ক্ষমতা নেই। তখন একটা শিয়াল কাশীরাজকে খেতে এল। কাশীরাজ শিয়ালের গলা কামড়ে ধরলেন। শিয়াল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। তার নখের খোঁচায় মাটি আলগা হতে লাগল। এক সময় কাশীরাজ গর্ত থেকে উঠে এলেন। মন্ত্রীদেরও উদ্ধার করলেন।
তখন ঐ শ্মশানে দুটি যক্ষ মরার ভাগ নিয়ে ঝগড়া করছিল। তারা কাশীরাজের কাছে বিচার চাইল। রাজা বললেন, ‘আমি সমান ভাগ করে দেব ঠিকই, তবে অশুচি হয়ে আছি, আগে আমাকে স্নান করাও।’ কোশলরাজের সুগন্ধি জল যক্ষবাই এনে দিল। রাজা তাতে স্নান করলেন। তারপর রাজাকে তারা কোশল রাজের কাপড়-চোপড়, সুগন্ধি আর ফুল এনে সাজিয়ে দিল। কোশলরাজের খাবার এনে খেতে দিল। কেননা রাজা খিদেয় কাতর ছিল। এবার যক্ষরা বলল, ‘আর কি করতে হবে বলুন।’ রাজা তখন প্রাসাদ থেকে মঙ্গল খড়গ আনতে বললেন। যক্ষরা তা আনা মাত্র মরাটিকে এ কোপে সমান দু টুকরো করে দিলেন। যক্ষরা মাংস খেয়ে খুশি হল। রাজাকে বলল, ‘আদেশ করুন মহারাজ, কি করতে হবে।’
রাজা তখন বললেন, ‘কোশল রাজের শোওয়ার ঘরে আমাকে নিযে চল।’ কোশল রাজ তখন অকাতরে ঘুমাচ্ছে। কাশীরাজ তার পেট মঙ্গল খড়গের উল্টো দিক দিয়ে খোঁচা মারলেন। ভয়ে কোশররাজ জেগে উঠল। অবাক হয়ে সে জিজ্ঞস করল,‘মহারাজ, চারদিকে সৈন্য, দরজা বন্ধ। একটা পিঁপড়েও গরতে পারবে না। এখানে আপনি এই সুন্দর পোশাকে খড়গ হাতে এলন কি করে।
কাশীরাজ তখন শিয়াল ও যক্ষের ঘটনা বললেন। বললেন, কিভাবে এখানে এসেছেন।
সব শুনে কোশলরাজের খুব অনুতাপ হল। সে কাশীরাজকে বলল, ‘নিষ্ঠুর রাক্ষসরা পর্যন্ত আপনার বশ।আপনার গুণ বুঝতে পারে। আর আমি মানুষ হয়েও কিছুই বুঝতে পারলাম না। ছিঃ ছিঃ ছিঃ।’ তারপর সে খড়গ ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করল, আর এরকম খারাপ কাজ করবে না। কাশীরাজের কাছে ক্ষমা চাইল। তারপর কাশরিাজকে রাজশস্যায় শুইয়ে নিজে মাটিতে শুলেন।
পরের দিন কোমলরাজ রাজসভায এসে কাশীরাজের কাচে আবার ক্ষমা চাইলেন। বলল, ‘মহারাজ, এবার থেকে আপনিই প্রজাপালন করবেন, শুধু রাজ্য রক্ষার ভার আমি নিলাম। কোশলরাজ সেই কুচক্রী লোকটাকে শাস্তি দিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে গের।
কাশারাজ সিংহাসনে বসে মনে মনে বাবলেন, ‘সত্যি উৎসাহ বড়ায় রাখতে পেরেছিলাম বলেই না আবার সব ফিরে পাওয়া গেল। আশায় বুক বেঁধে উৎসাহ রাখাই মানুষের কর্তব্য।’
0 coment�rios: