পুরাকালে বোধিসত্ত্ব এক গোজন্ম লাভ করছিলেন। তাঁর বয়স তখন খুব অল্প ছিল। তাঁর মালিক তাকে নিয়ে এক বৃদ্ধার বাড়িতে বাস করত। পরে ঘরের ভাড়া দিতে না পেরে বোধিসত্ত্বকে বৃদ্ধার কাছে দান করে যায়। বৃদ্ধা তাঁকে নিজের সন্তানের মোট স্নেহ করে পালন করত। লোকে সেই বৃদ্ধাকে ঠাকুমা বলে ডাকত।
বোধিসত্ত্বের গায়ের রঙ খুব কাল ছিল। তাই তাঁর নাম ছিল কৃষ্ণ। তিনি অন্যান্য গরুদের সাথে নদীর ধারে মাঠে চরতেন। আবার গ্রামের ছেলেরা তাঁর সঙ্গে খেলা করে বেড়াত। তাদের আবার কেউ কেউ শিং ধরে টানত। কেউ কেউ আবার তাঁর পিঠের উপর চড়ত।
বোধিসত্ত্ব একদিন ভাবতে লাগলেন, এই বৃদ্ধার আমার মা। তিনি বড় গরীব। তিনি অতি কষ্টে আমাকে পালন করেন। সুতরাং তার জন্য আমার কিছু অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করা উচিত।
এই ভেবে সেদিন বোধিসত্ত্ব নদী তীরে মাঠে চড়তে গেলেন।
সেদিন এক বণিক পাঁচশো বোজাই গরুর গাড়ি নিয়ে সেই পথে কোন দূর দেশে বাণিজ্য করতে যাচ্ছিল।
তখন নদীতে জল ছিল। কিন্তু নদীগুলোর পথ এত উচু-নীচু ছিল যে পাঁচশো গাড়ির এক হাজার গরু মোটেই গারিগুলো তান্তে পারছিল না।
নদীগুলোর ধারে নিকটেই এক মাঠে বোধিসত্ত্ব অন্যান্য গরুদের সাথে চরছিলেন। বণিক সেই গরুর পালের কাছে এসে উৎকৃষ্ট জাতীয় বলদের খোঁজ করতে লাগলেন। অবশেষে বোধিসত্ত্বের উপর তার চখ পরল।
বোধিসত্ত্ব গরু হয়ে জন্মালেও তাঁর দেহে কতগুলো সুলক্ষণ ছিল যে তাঁকে দেখলেই উৎকৃষ্ট জাতীয় বলে মনে হত। বোধিসত্ত্বকে দেখা মাত্র বণিক বুঝতে পারল এই বলদের দ্বারা তার কাজ সিদ্ধি হবে। এই বলদ তার পাঁচশো গাড়িকে ঐ উচু-নীচু পথ হতে টেনে উদ্ধার করতে পারবে। সে তখন মাঠের রাখালদের জিজ্ঞেস করল, এই গরুতি কার? আমি একে আমার গাড়িতে জুতে গাড়িগুলো পার করতে পারলে উপযুক্ত ভাড়া দেব।
আপনি জুতে দিন। এর কোন মালিক নেই।
কিন্তু বণিক যখন বোধিসত্ত্বের নাকে পড়িয়ে টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করল, তখন বোধিসত্ত্ব দাঁড়িয়ে রইলেন।এক পাও নড়লেন না। আগে ভাড়া ঠিক না করলে তিনি যাবেন না, এই সঙ্কল্প করলেন তিনি মনে মনে। তখন বণিক তাঁর অভিপ্রায় বুঝতে পেরে বলল, আপনি যদি আমার পাঁচশো গাড়ি পার করে দেন, তাহলে আমি গাড়ি প্রতি দুই মুদ্রা করে দেব। অর্থাৎ মোট সহস্র মুদ্রা।
বণিক এই কথা বলার সাথে সাথে বোধিসত্ত্বকে আর জোর করে টেনে নিয়ে যেতে হল না, তিনি নিজেই গারিগুলর দিকে এগিয়ে গেলেন। বণিকের অনুচরেরা বোধিসত্ত্বকে এক এক গাড়ির সাথে জুতে দিল আর বোধিসত্ত্ব একে একে গারিগুলকে নদীর পর পারে রেখে এলেন। এইভাবে বণিকের পাঁচশো গাড়িকেই পার করে দিলেন বোধিসত্ত্ব।
বণিক তখন চাতুরি করে গাড়ি প্রতি এক মুদ্রা করে পাঁচশো মুদ্রা একটি থলিতে ভরে সেই থলেতি বোধিসত্ত্বের গলায় বেঁধে দিল।
বোধিসত্ত্ব ভাবলেন, এ ব্যক্তি যে ভাড়া দেবার কথা বলেছিল সেই ভাড়া দিচ্ছে না। অতএব এক যেতে দেব না।
মনে মনে তিনি এই স্থির করে আগের গাড়িটির সামনে গিয়ে পথরোধ করে দাঁড়ালেন। বণিকের লোকেরা শত চেষ্টা করেও সরাতে পারল না পথ থেকে। তখন বণিক তার ভুল বুঝতে পারল। বুঝতে পারল এই গরু সাধারণ গরু নয়। আমি একে প্রতিশ্রুত অর্থ দিইনি এ তা বুঝতে পেরেছে। এ অলৌকিক শক্তির অধিকারী।
বণিক এবার এক হাজার মুদ্রা থলিতে ভরে বোধিসত্ত্বের গলায় বেঁধে দিল। বোধিসত্ত্ব সেই মুদ্রা নিয়ে তাঁর পালিকা মাতা সেই বৃদ্ধার কাছে চলে গেলেন। বণিকও তার পাঁচশো গাড়ি নিয়ে তার গন্তব্য স্থানে চলে গেল।
গ্রামের ছেলেরা “বৃদ্ধার ছেলে কি নিয়ে যাচ্ছে” বলে চিৎকার করতে করতে বোধিসত্ত্বের দিকে ছুতে এলে বোধিসত্ত্ব তাদের শিং দিয়ে তাড়িয়ে দিল। শেষে তিনি বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলেন। বৃদ্ধা বোধিসত্ত্বের গলায় একটি থলিতে ভরা এক হাজার মুদ্রা পেয়ে আশ্চার্য হয়ে বলল, একই বাছা, এত মুদ্রা কোথায় পেলি?
তখন রাখালরা বৃদ্ধাকে সব বৃত্তান্ত খুলে বল্ল।বৃদ্ধা সব কথা শূনে বোধিসত্ত্বকে বলল, তুই উপারজ করে আমাকে খাওয়াবি, আমি কি তোকে কখনো একটা বলছি? কেন তুই আমার জন্য এত কষ্ট করতে গেলি?
পাঁচশো গাড়ি টেনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন বোধিসত্ত্বকে লক্ষ্য করে বৃদ্ধা গরম জলে থাকে স্নান করাল। তারপর তাঁর গায়ে তেল মাখিয়ে উৎকৃষ্ট খাদ্য ও পানীয় দিল।
বৃদ্ধা ও বোধিসত্ত্ব দুজনই এইভাবে সৎ জীবন-যাপন করার পর কর্মের অনুরূপ ফল ভোগের জন্য পরলকে গমন করলেন।
[সংগ্রহীত]
পুরাকালে বোধিসত্ত্ব এক গোজন্ম লাভ করছিলেন। তাঁর বয়স তখন খুব অল্প ছিল। তাঁর মালিক তাকে নিয়ে এক বৃদ্ধার বাড়িতে বাস করত। পরে ঘরের ভাড়া দিতে না ...
About author: Sisir Suvro
Cress arugula peanut tigernut wattle seed kombu parsnip. Lotus root mung bean arugula tigernut horseradish endive yarrow gourd. Radicchio cress avocado garlic quandong collard greens.
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 coment�rios: