রামকানাই ভাল মানুষ-নেহাত গোবেচারা। কিন্তু ঝুটারাম লোকটি বেজায় ফন্দিবাজ। দুইজনে দেখা-শোনা আলাপ-সালাপ হল। ঝুটরাম বললে, ‘ভাই দুজনেই বোঝা বয়ে কামকা কষ্ট পাই কেন? এই নাও, আমার পুঁটলিটাও তোমায় দিই-এখন তুমি সব বয়ে নাও। ফিরবার সময় আমি বইব। ‘রামকানাই ভালমানুষের মত দুজনের বোঝা ঘাড়ে বয়ে চলল।
গ্রামের কাছে এসে তাদের খুব খিদে পেয়েছে। রামকানাই বলল, ‘এখন খাওয়া যাক-কী বল?’ ঝুটারাম বলল, ‘বেশ ত, এক কাজ করো, খাবারের হাঁড়ি দুটোই খুলে কাজ নেই মিছামিছি দুটোই নষ্ট হবে কেন? এখন তোমারটা থেকে খাওয়া যাক। ফিরবার সময় আমার খাবারটা খাওয়া যাবে। রামকানাই তাই করল। ঝুটরাম বলল, ‘ভাই তোমার বাড়ি কে কে আছে?’ রামকানাই তার বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী ছেলেপিলে সকলের কথা বলতে লাগল-তার মেয়ে কত বড় হয়েছে-তার ছেলে কি করে-সব কথা বলল। রামকানাই যত কথা বলে, ঝুটারাম ততই আরো প্রশ্ন করে, আর গপাগপ ভাত মুখে দেয়। রামকানাই গল্পেই মত্ত, তার যখন হুঁশ হল- ততক্ষণে খাবার প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
ঝুটারাম খাওয়া দাওয়া শেষ করে গম্ভীরভাবে ধুয়ে বলল, ‘ভাই একটি কথা। তুমি যে আমায় খাওয়ালে, সে এমন বিশ্রী রান্না, যে কি বলব! তুমি এমন খারাপ লোক, তা আমি জানতাম না। নেহাত তুমি বন্ধু লোক, তোমায় আর বেশি কি বলব, কিন্তু এরপর আর তোমার সঙ্গে আমার ভাব রাখা চলে না। আমি চললাম।’ এই বলে সে ভরা হাঁড়ি কাঁধে নিয়ে হন হন করে চলে গেল। সন্ধ্যার সময় পেটে খিদে নিয়ে এতখানি পথে হেঁটে কি করে সে বাড়ি ফিরবে-তাই ভেবে কাঁদতে লাগল।
এমন সময় কাজির পেয়াদা সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। সে রামকানাইকে বললে, ‘কাঁদ কেন?’ রামকানাই তাকে সব কাথা বলল। পেয়াদা বলল, ‘এই কথা। চলো দেখি বাজি সাহেবের কাছে। তিনি এর বিচার করেন।’ কাজির কাছে হাজির হতেই হুজুর বললেন, ‘কি চাও?’ রামকানাই তাঁকেও সব শোনাল। কাজি শুনে বললেন, ‘হাঃ-হাঃ-হাঃ-হাঃ-হাঃ-হাঃ! এমন মজা ত কখনো শুনি নি! আরে, তোকে দিয়ে জিনিস বইয়ে, আবার তোরই ভাত খেতে গেল? তোর আক্কেল ছিল কোথায়? হাঃ-হাঃ-হাঃ- বোলাও ঝুটারামকো!’ পেয়াদা ছুটল-তিন মিনেটের মধ্যে ঝুটারামের ঝুঁটি ধরে কাজির সামনে দাঁড় করাল।
কাজি বললেন, ‘আরে দাঁড়াও দাঁড়াও। মোড়লকে ডাকো, শেঠজীকে ডাকো, কোটাল বদ্যি গুরুমশাই - ঢাক পিটিয়ে সবাইকে ডাকো, এমন মজার কথাটা সবাই এসে শুনে যাক।’ দেখতে দেখতে ঘর ভরিয়ে ভিড় জমিয়ে লোকের দল হাজির হল। তখন কাজি বললেন, ‘বাবা ঝুটারাম, এবার তুমি বলো দেখি, তোমাতে আর এতে কি হয়েছিল? ঝুটারাম ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললে, ‘দোহাই হুজুর, আমি কিছুই জানি না। ঐ হতভাগা আমায় ভুলিয়ে খানিকটা খাবার খাইয়েছিল-সেই থেকে আমার মাথা ঘুরছে আর গা কেমন করছে।’
এই কথা শুনে রেগে চিৎকার করে কাজি বললেন, ‘পাজি, আমার মজার গল্পটা মাটি করলি। খাবার খেলি আর মাথা ঘুরল, এ কি একটা কথা হল? পেয়াদা, দেখ ত ওর কাছে কি আছে। সব কেড়ে রাখ। ব্যাটার গল্পের মধ্যে যদি একটু রস থাকে। ও-সব ঐ রামকানাইকে দিয়ে দে। ও যা বলছে সত্যি হোক, মিথ্যা হোক, তার মধ্যে মজা আছে। আরে-হাঃ-হাঃ- হাঃ-হোঃ-হোঃ-হোঃ।’
রামকানাই ভাল মানুষ-নেহাত গোবেচারা। কিন্তু ঝুটারাম লোকটি বেজায় ফন্দিবাজ। দুইজনে দেখা-শোনা আলাপ-সালাপ হল। ঝুটরাম বললে, ‘ভাই দুজনেই বোঝা বয়ে ...
About author: Sisir Suvro
Cress arugula peanut tigernut wattle seed kombu parsnip. Lotus root mung bean arugula tigernut horseradish endive yarrow gourd. Radicchio cress avocado garlic quandong collard greens.
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 coment�rios: